যে কারণে মার্কেটিং ইন্টার্ন দেখতে পারি না

ডেস্কে বসে কোড করছি, হঠাৎ অফিসের গ্রুপচ্যাটে দেখলাম একটা টেক্সট আসলো। সবাইকে হলরুমে যেতে বলা হয়েছে, আর্জেন্ট জেনারেল মিটিং। হলে গেলাম। রুমের এপাশ থেকে ওপাশ পর্যন্ত লম্বা টেবিল - আমি সহ প্রায় ত্রিশজনের মতো বসে আছি। ইন্টার্ন থেকে শুরু করে সিইও সবাই মিটিংয়ে হাজির। ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপার আব্বাস আজকে বিয়ের বাজার করার জন্য ছুটি নিয়েছিল, সে-ও দেখলাম আমার উলটা পাশের এক চেয়ারে বসে আছে!

মিটিং শুরু হলো। চিফ সিকিউরিটি ইঞ্জিনিয়ার জানালেন যে আমাদের ডেটাবেজ হ্যাক হয়ে গেছে। অনেক ইউজারের ডেটা চুরি হয়ে গেছে। ডেটা চুরি হয়েছে বলতে ইউজারের নাম ঠিকানা ইমেইল এইসব। এমনিতে আহামরি মনে না হলেও টেক নলেজ থাকা যে কেউ বুঝবে কত বড় সমস্যায় পড়েছি আমরা। যাই হোক, মোটামুটি কার্যবিধি নির্ধারিত হলো। এতক্ষণে সিকিউরিটি টিম বাকি কিছু যেন হ্যাক না হয় সে ব্যবস্থা করে ফেলেছে। আমাদেরকে কিছু নতুন সিকিউরিটি রুল জানানো হলো যেন কারো অসাবধানতায় আবার কোন ক্ষতি না হয়।

শেষে সিইও বললেন, “এতক্ষণে খবরে নিউজ হয়ে গেছে এই ব্যাপারে। আমাদের কোনভাবে গ্রাহকের আস্থা ফেরত আনতে হবে।” টেবিলের এক পাশ থেকে আনাস নামের একজন হাত তুলে বললো, “স্যার আমরা ফেসবুকে পোস্ট দিতে পারি যে আমাদের ডেটাবেইজ ডিলিট করে দিসি। ডেটা না থাকলে হ্যাক হওয়ার আর কোন প্রশ্নই আসে না।”

সিইও ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই সে বললো, “না মানে কাচ্চি ভাইয়ের খাবারে রঙ পাওয়ার পর কিন্তু ওরা সাদা রঙের জর্দা বের করসিলো। খুবই ইফেক্টিভ মার্কেটিং ছিল।” তার কথা শুনে সিইও দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, “আমরা টেক ফাইন্যান্স কোম্পানি। কাচ্চি ভাই না।” শুনে আনাস চুপ করে গেল।

সিইও একটু দম নিয়ে বললেন, “আমরা এখনো হ্যাকার গ্রুপটাকে আইডেন্টিফাই করতে পারি নাই। যত জলদি সম্ভব ওদেরকে বের করা লাগবে।” আনাস আবার উৎসাহের সাথে বলে উঠলো, “স্যার ফেসবুকে একটা পোস্ট দেই - অমুক হ্যাকার গ্রুপের মেম্বাররা ৫% ডিস্কাউন্ট পাবে। আইডি কার্ড সাবমিট করা মাস্ট। তাইলে আমরা ওদেরকে ধরে ফেলতে পারবো।”

এইবার শুধু সিইও না, পুরা মিটিংয়ের সবাই ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। সে আমতা আমতা করে বললো, “না মানে ফেসবুকে দেখেন না কেউ এক্সপোজ হলে ওর কলেজের সবাইকে রেস্টুরেন্টগুলা ডিস্কাউন্ট দেয়? ভালো ব্যবসা হয়।”

সিইও আমাদের চেয়ে বয়সে বেশি বড় না কিন্তু পদের কারণে উনি সবাইকে বাবা ডাকতে ভালোবাসেন। আনাসের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “বাবা, তুমি কোন ডিপার্টমেন্টে কাজ করো?”

আনাস সগর্বে বলে উঠলো, “স্যার আমি এখানে মার্কেটিং ইন্টার্ন।” তার কথা শেষ না হতে হতে সিইও কষে তাকে একটা চড় লাগালেন দেখলাম।

থাপ্পড়ের শব্দ শুনে মিটিংরুম একদম নিঃশব্দ হয়ে গেল। শুধু আমার পাশে বসা প্রজেক্ট ম্যানেজার দেখলাম বিড়বিড় করছেন, “দাজ্জালরে পাঠানোর সময় হয় নাই দেখে আল্লাহ দুনিয়াতে এই মার্কেটিং ইন্টার্নগুলারে পাঠাইতেসে।”