ঈদকথন ২০২৩
বাংলাদেশে যখন ঈদের নামাজ পড়তাম তখন কিছু ঘটনা সবসময় ঘটতো। নামাযের আগে ইমাম সাহেব কয়েকবার নিয়ম বলবেন। উনি যখন নিয়ম বলবেন তখন সবাই ঝিমোবে কারণ সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে রেডি হয়ে নামাযে আসছে। উনার বর্ণনা থেকে শুধু এইটা জানা যাবে যে ঈদের নামাযে এক্সট্রা ছয় তাকবীর থাকে।
নামায শুরু হবে। ইমাম সাহেব প্রথম তাকবীর দিবেন। আমি হাত উঠিয়ে আবার হাত নামাবো। আমার পাশেরজন হাত বাধবে। এরপর ডানে বামে তাকিয়ে দেখবে যে কেউ হাত ধরে নাই। উনি আস্তে করে হাত ছেড়ে দিবে। দ্বিতীয় তাকবীরে এই ভুল করবেন না। কিন্তু তার পাশেরজন আবার তাকে দেখে দ্বিতীয় তাকবীরের পর হাত বেধে ফেলবে। আর সামনেরজন দেখা যাবে রুকুতে চলে গেসে। তিন নাম্বারে গিয়ে র্যান্ডম। যার যেটা মনে হয় ঠিক সেটা।
সবার সিঙ্ক্রোনাইজেশন হতে হতে দ্বিতীয় রাকাত শুরু হয়ে যাবে। এরপর ইমাম তাকবীর দিলে সবাই হাত উঠাবে আর একজন চলে যাবে রুকুতে। এই ব্যাটা রুকু থেকে উঠবে পরের তাকবীরে। এরপর এক্সট্রা তাকবীর শেষ হওয়ার পর আবার রুকুতে যাবে। সুযোগ দিলে জানাজার নামাযেও রুকুতে যাইতো।
এর মধ্যে আপনি যে খুব আরামে নামায পড়ে ফেলসেন এমন না। কারণ আপনার মাথা আটকে গেসে সামনেরজনের লুঙ্গির সাথে।
নামায শেষে খুতবা শুরু। খুতবার সময় কথা বলা নিষেধ। কিন্তু পাশে দুইটা পিচ্চি কথা বলবে কারণ তারা রুল জানে না। এই দুজন নামাযের মধ্যে একজন আরেকজনের পিঠে কিল দিচ্ছিল। খুতবার টাইমে এক মুরব্বী তাদেরকে গালি দিয়ে বলবে চুপ করতে।
পুরাই ভাইবের ব্যাপারস্যাপার।
যাই হোক নামায শেষে দেখবেন যে আপনার সাথে কোলাকুলি করার জন্য বাপ বাদে কেউ নাই। কাতার ঠিক করতে গিয়ে আপনি কই আসছেন কোন ঠিক নাই। ঈদের দিনই কবরের কথা মনে করানো হবে - বুঝানো হবে যে আপনি আসলে একা।
সব মিলিয়ে ওয়ান অফ আ কাইন্ড।
আজকে ঈদের নামায পড়তে নিয়ে বেশ মন খারাপ হলো। প্রথমত, কেউ লুঙ্গি পরে নাই। চাইলেও সামনেরজনের লুঙ্গিতে মাথা আটকানো পসিবল না। এর মধ্যে সবাই নামাযের আগের বয়ানে মনযোগী। তাতার, রাশিয়ান, ইংরেজি - তিন ভাষায় আলোচনা হচ্ছে। কোন সময় নিজের ল্যাঙ্গুয়েজ এসে পড়ে আর কোন ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছুটে যায়, এই ভয়ে কেউ ঝিমাতে পারছে না।
এর মধ্যে রুলও সব জানিয়ে দেয়া হলো। এটাও বলা হলো যে “জুম্মার নামাযের খুতবা নামাযের আগে। ঈদের নামাযের খুতবা নামাযের পরে। খুৎবার সময় কথা বলা যাবে না।”
নামায হলো, আশেপাশে কেউ ভুল করলো না। নরমালি শেষ হয়ে গেল।
যখন ভাবলাম রুমমেট বাদে কোলাকুলি করার কেউ নাই- তখন দেখি ওমা! চিনে না জানে না মানুষ এসে ঈদ মোবারক বলতেসে। দেখতে দেখতে একটা রিং হয়ে গেল। সবাই সবার সাথে কোলাকুলি করতেসে।
“একটি ঈদের জামাতে ২০০ জন মানুষ। প্রত্যেকে একজন আরেকজনের সাথে কোলাকুলি করলে মোট কোলাকুলির সংখ্যা কত?”
অনেক!