একটি পলিটিকাল রম্য
নর্স মিথোলজিতে বজ্রপাতের দেবতা হচ্ছে থর। গড অব মিশচিফ বা দুষ্টতার দেবতা হচ্ছে লোকি। তারা দুইজন ঠিক করলো, জায়ান্টদের এক রাজ্য উটগার্ডে যাবে তাদের রাজা উটগার্ডলোকির সাথে দেখা করতে। সাথে এক মনুষ্যসন্তান জালফি। তিনজন রওনা দিলো উটগার্ডের উদ্দেশ্যে।
পথে বেশ কাঠখড় পুড়িয়ে উটগার্ডে পৌঁছানোর পর থর আর লোকি দেবতা হিসাবে একটু গ্র্যান্ড এন্ট্র্যান্স প্রত্যাশা করেছিলো। কিন্তু দেখা গেল উটগার্ডের রাজা উটগার্ডলোকি তাদেরকে তেমন কোন পাত্তা দিচ্ছেন না। অগত্যা তারা খাতিরযত্নের তেমন আশা না করে নিজেদের পরিচয় দিল। পরিচয় পাওয়ার পরও উটগার্ডলোকির মনে তেমন কোন পরিবর্তন হলো না। তিনি থর, লোকি আর জালফিকে বললেন যে উটগার্ডের সভায় খাতিরযত্ন পেতে হলে আসলে আগে নিজেদের যোগ্যতা প্রদর্শন করতে হবে। তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন যে কার কী সামর্থ্য আছে।
থর বললো যে সে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় মদখো্র। সে যে পরিমাণে মদ খেতে পারে অতো মদ কেউই খেতে পারে না। আর সে একজন ভালো কুস্তিগীরও। কুস্তিতে তাকে হারানো অসম্ভব। লোকি বললো যে সে দুনিয়ার সবচেয়ে বড় পেটুক। সে যত জলদি খাবার শেষ করতে পারে সেটা আর কেউ পারে না। জালফি অবশ্য এতো ক্ষমতাশালী না। সে বললো যে সে খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে। দৌড় প্রতিযোগিতায় তার সাথে দৌড়ে কেউ পেরে উঠে না।
উটগার্ডলোকি বললো, “বেশ। তাহলে প্রতিযোগীতা হয়ে যাক।”
প্রথমে শুরু হলো লোকির খাবার খাওয়ার কম্পিটিশন। টেবিলের একপাশে লোকি আর অন্যপাশে লোগি নামের এক জায়ান্ট। দুইজন একই সময় খাবার খাওয়া শুরু করবে। খেতে খেতে যে টেবিলের মাঝে আগে পৌঁছাবে সে জিতবে।
খাওয়া শুরু হলো। লোকি যত দ্রুত সম্ভব খেতে লাগলো। খেতে খেতে একই সময়ে টেবিলের একবারে মাঝে এসে সে আর লোগি থামলো। লোকি বললো, “তাহলে এটা ড্র?” তার কথা শুনে সভার সবাই হাসতে লাগলো। লোকি দেখলো যে সে মাংস খেয়ে প্লেটে হাড্ডি রেখে দিয়েছে। কিন্তু লোগি মাংস আর হাড্ডির ফারাক করে নাই। এমনকি প্লেটও খেয়ে ফেলেছে। যেহেতু লোগি বেশি খেয়েছে সেহেতু সে জিতে গেলো। কিন্তু লোকি যেহেতু খুব ভালো চেষ্টা করেছে সেহেতু সে অতিথি হিসাবে প্রাসাদে জায়গা পেলো।
এরপর জালফির পালা। সে হুগি নামের এক বাচ্চার সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতায় নামলো। তিনবার দৌঁড় হবে। জালফি যদি একবার জিতে তাহলেই তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। প্রথমবার জালফি যত দ্রুত সম্ভব দৌঁড়ালো। কিন্তু এর মধ্যে হুগি ফিনিশ লাইনে পৌঁছিয়ে আবার ঘুরে জালফির কাছে চলে এলো। উটগার্ডলোকি বললো, “তুমহারা বাস কি বাত নেহি।” জালফি দ্বিতীয় দৌড়ে এই অপমানের বদলা নিতে চাইলো। পরের দৌঁড়ে সে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলো কিন্তু একটুর জন্য হেরে গেলো। উটগার্ডলোকি বললো, “বহোত খুব!” তৃতীয় দৌড়েও জালফি হেরে গেলো। কিন্তু উটগার্ডলোকি বললো যে এতো দ্রুত দৌড়াতে কোন মানুষকে সে দেখেনি। তাই অতিথি হিসাবে তাকে জায়গা দেয়া হলো প্রাসাদে।
থরের জন্য চ্যালেঞ্জ আসলো বেশ সহজ। জায়ান্টরা যে শিঙ্গায় মদ খায়, তিন ঢোকে তা শেষ করা লাগবে। থর খাওয়া শুরু করলো। তিন ঢোক পরে দেখা গেলো যে আসলে সেটা মোটেও খালি হয় নি। যে পরিমাণ মদ ছিলো সেটুকুই আছে। মাঝে থরের পেট ভর্তি হয়ে গেছে মদে। বলা যায় যে থর বাজেভাবে চ্যালেঞ্জে হারলো।
তাকে দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ দেয়া হলো শক্তির পরীক্ষার জন্য। বলা হলো উটগার্ডলোকির পোষা বিড়ালটাকে থর তোলা লাগবে। থর তার সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করালো। কিন্তু বিড়ালের এক পা একটু উপরে উঠানো বাদে তেমন কিছু করতে পারলো না। রেগে গিয়ে থর বললো যে সে কারো সাথে কুস্তি লড়বে। উটগার্ডলোকি তার বৃদ্ধ কাজের মহিলার সাথে থরকে কুস্তি খেলতে বললেন। থর সেটাতেও হারলো। কিন্তু থরের চেষ্টা দেখে তাকে জায়গা দেয়া হলো অতিথি হিসাবে।
পরদিন থর, লোকি আর জালফি বিদায় নিতে যাবে। তখন উটগার্ডলোকি এসে হাজির। সে বললো যে আসলে আগের দিন তাদের তিনজনের সাথে একটু মজা করা হয়েছে। যে প্রতিযোগিতায় তারা অংশ নিয়েছিলো সেগুলো ছিলো আসলে ইল্যুশন। তিনজন কিছুই বুঝলো না। উটগার্ডলোকিকে বললো খোলাসা করতে।
উটগার্ডলোকি বললো, “দেখো জালফি। তুমি আসলে হুগির সাথে দৌঁড়াও নি। তুমি দৌঁড়িয়েছো আসলে নিজের চিন্তার সাথে। মানুষ কখনোই চিন্তার আগে কাজ করতে পারে না। এজন্য দৌঁড় প্রতিযোগিতায় জিতো নি।”
তারপর সে থরকে বললো, “তুমি আসলে মদ খাওনি। সেটা ছিলো মহাসমুদ্র। অবশ্যই মহাসমুদ্র খেয়ে শেষ করা সম্ভব না।” তারপর বললো, “যে বিড়ালটাকে তুমি উঠানোর চেষ্টা করেছিলে সেটি আসলে ইয়োর্মুনগান্দর নামের এক সাপ। সে পুরো পৃথিবীকে জড়িয়ে ধরে আছে। একে উঠানো সম্ভব না।” থর জিজ্ঞেস করলো, “আর যেই বৃদ্ধার সাথে কুস্তি খেললাম?” “সে কোন বৃদ্ধা নয়। তুমি কুস্তি করেছো বার্ধক্যের সাথে। কেউ যতোই শক্তিশালি হোক, বার্ধক্যের সাথে পেরে উঠা সম্ভব না।” উটগার্ডলোকি বললো।
লোকি জিজ্ঞেস করলো, “আর আমি যার সাথে খাবারের কম্পিটিশন করলাম। “ উটগার্ডলোকি প্রথমে ইতস্তত করলো। এরপর বললো, “তুমি যার সাথে খাবার খাওয়ার কম্পিটিশন করেছো। সে আসলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এইজন্য হাড্ডি মাংস কিংবা প্লেটের বাছবিচার করে নি। সবই খেয়েছে। পারলে টেবিলও খেতো যদি সেটার কোয়ালিটি খুব ভালো না হতো। আর আরেকটু সময় দিলে তোমার ভাগের খাবারও খেয়ে ফেলতো কোন অপেক্ষা না করেই।”
এই বলে উটগার্ডলোকি গায়েব হয়ে যায়। সাথে গায়েব হয়ে যায় তার রাজ্যও। তারা তিনজন দেখলো তাদের সামনে কেবল মেঘের কুন্ডলী।