ইকোনমিস্ট বিপ্লবী

ঢাকা কলেজের পাশে এক বার আছে, নাম গ্যালাক্সি। মোস্তফা নামের এক লোক সেখানে প্রতি সপ্তাহে কেরু খেতে যান। উনি কালকেও গেছেন। গিয়ে কেরু খাচ্ছেন, তখন দেখলেন কোণায় আমার কম্যুনিস্ট বন্ধু রিদওয়ান আর তার আরেক বন্ধু মিলে পলিথিনে ফুঁ দিচ্ছে।। মোস্তফা সাহেব এক বারটেন্ডারকে জিজ্ঞেস করলেন এরা বারে বসে পলিথিন ফুঁকছে কেন। বারটেন্ডার বললো, “রেগুলার কাস্টমার স্যার। মাঝেমধ্যে ডেন্ডি খায়। টাকা দেয় তাই প্রবলেম নাই।” মোস্তফা সাহেবের বেশ আগ্রহ হলো। উনি নিজের টেবিল থেকে উঠে রিদওয়ানের টেবিলে গেলেন।

“তোমাদের সাথে বসতে পারি?”

“বসেন।”

“তোমরা বারে বসে ডেন্ডি খাচ্ছো দেখে ইন্টারেস্টিং লাগলো। এজন্য কথা বলতে এলাম।”

“অ। বাবার অসুখ। টাকা নাই। এজন্য কম-দামী খাচ্ছি। আর…” বলে রিদওয়ান চুপ করে গেল।

“আর?”

“আর একটু আগে ক্রিমসন কাপে গিয়ে সব টাকা শেষ। মদ কিনার টাকা নাই।”

মোস্তফা সাহেব বুঝলেন ব্যাপারটা। টাকার টান পড়লে কেরু না কিনে জুতার আঠা কেনাই ভালো। জিজ্ঞেস করলেন, “ডেন্ডি কখনো খাই নি। ডেন্ডি খেয়ে কী করো? নেশা উঠে?”

রিদওয়ান পলিথিন থেকে আরেকটু জোরে নিশ্বাস নিয়ে এরপর বললো, “কী আর করবো? শ্রেনীবৈষম্য নিয়ে আলোচনা করি। প্রলেতারিয়াতের জন্য কাজ করার অনেক ইচ্ছা। পশ্চিমা একটা দেশে গিয়ে কাজটা করতে পারলে সহজ হতো। এখানে ব্যাপারটা এতো ইজি না।”

প্রলেতারিয়াতের কথা শুনে উনার ভালো লাগলো। উনি নিজে সোভিয়েত ইউনিয়নে পড়ালেখা করেছেন। মদ খাওয়ার অভ্যাসটাও সেখানেই গড়ে উঠেছে। জিজ্ঞেস করলেন, “তা কম্যুনিস্ট নাকি? ছাত্র ইউনিয়ন?”

“হুম। লাল সালাম। কোন দল সেটা বলবো না। লাল সালাম।” রিদওয়ানের বন্ধু নেশার ঘোরে বললো।

“ভালো ভালো। কোথায় পড়? চারুকলা?”

“নাহ। ওইখানে তো পড়ে সব নেশাখোর।”

“ঠিকই বলেছ। তাহলে? আইবিএ নাকি?”

রিদওয়ান এবার একটু কষ্ট পেল। বললো, “নাহ আংকেল। আইবিএ তে পরীক্ষা দিছিলাম কিন্তু টিকি নাই। ঢাকা ভার্সিটিতে ইকোনমিকস পড়ি এখন।”

ততক্ষণে একজন এসে বিল দিয়ে গেল। আঠা, বাদামমাখা, আর হাবিজাবি মিলিয়ে প্রায় ৩০০টাকার মতো আসছে বিল।

মোস্তফা সাহেব একটু চুপ থেকে বললেন, “আচ্ছা তাহলে উঠি। পরে আরেকদিন কথা হবে।” এরপর উনি উঠে চলে গেলেন।

রিদওয়ান কিছু বললো না। চুপ করে থাকলো। তার চোখ লাল। তবে চেহারা দেখা বুঝা যাচ্ছে যে সে রেগে আছে। বন্ধু একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কোন সমস্যা কমরেড?” রিদওয়ানের চোখ জ্বলে উঠলো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো, “গরীবচোদা শালা বিলটা দিয়া গেল না।”