ঈশ্বর আমাদেরকে ত্যাগ করেছেন!

১৯৮৩ সালে একদল আমেরিকান বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে সেন্সরী ডিপ্রাইভেশনের উপর একটা রিসার্চ চালানো হয়। বিজ্ঞানীদের প্রত্যেককেই ধার্মিক বলা যেতে পারে কেননা রিসার্চের মূল বিষয় ছিল কোনভাবে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগ করা যায় নাকি। রিসার্চার টিমের লীড যিনি, তার মতে ঈশ্বরের সাথে যোগাযোগের একমাত্র উপায় হচ্ছে সব ধরণের দুনিয়াবী বিষয় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা। মনে হতে পারে যে মৃত্যু ছাড়া তো আর কোন উপায় নেই এই কাজের জন্য, তবে বিজ্ঞানীদল একটা সমাধান বের করতে পেরেছিলেন। তারা সিদ্ধান্ত নেন যে সাবজেক্টকে তার পঞ্চইন্দ্রিয় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তবে তার মাসল কন্ট্রোল নেয়া হবে না। তার যেহেতু নিজের সেন্সগুলোর সাথে কোন সম্পর্ক থাকবে না, তাই সে টেকনিকালি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন কিন্তু মাসল কন্ট্রোল থাকায় সে বিজ্ঞানীদলের সাথে ঠিকভাবেই যোগাযোগ করতে পারবে।

সাবজেক্ট হিসাবে নেয়া হলো মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এক মাঝবয়সী লোককে। তাকে এই রিসার্চের সাবজেক্ট হওয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রমিজ করা হলো, আর জানানো হলো যে রিসার্চ সাকসেসফুল হলে তাকে মুক্তি-ও দিয়ে দেয়া হবে। যে দুইদিন পর মরতে চলেছে, সে না মরেই ঈশ্বরের সাথে কথা বলবে, আর সব ঠিক থাকলে পরে আর মরাও লাগবে না - এমন অফার ঠিক ফেলে দেয়া যায় না। তো যাই হোক বছরের মাঝামাঝি সময়ে রিসার্চ শুরু হলো।

প্রথম সাতদিনে বেশ কয়েকটা কমপ্লিকেটেড সার্জারি করে সাবজেক্টের ব্রেইনের সাথে পাঁচ ইন্দ্রিয়ের যে সংযোগ সেগুলো বন্ধ করে ফেলা হলো। শেষ অস্ত্রোপচারের পর সাবজেক্টের পৃথিবীর সাথে যোগাযোগের কোন উপায় থাকলো না। এই পর্যায়ে সে দেখতে, শুনতে, স্বাদ গন্ধ কিংবা স্পর্শ নিতে পারে না। তার নিজের চিন্তাশক্তি বাদ দিলে সে সম্পূর্ণ একা। আট-তম দিন তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হলো এবং তার পরদিন থেকে মেইন রিসার্চ শুরু।

নবম দিন মোটামুটি স্বাভাবিক গেল। সাবজেক্ট কিছু কথা বলতো রিসার্চারদের সাথে। অবশ্যই সে নিজে শুনতে পারতো না। রিসার্চাররা কিছু বলছে নাকি সে নিজেও তা জানতো না। আপন মনেই কথা বলতো সে। পরদিন তার কথাবার্তা অসংলগ্ন হয়ে এল। গবেষকদল ধারণা করলেন যে সে কথা বলতে বলতে ক্লান্ত। যেহেতু তার কোন সেন্স নেই এবং একা শুয়ে থাকা ছাড়া কোন কাজও নেই, তাই হয়তো ব্রেইনও ঘুমাতে চাচ্ছে না। কিন্তু একটানা কতোই বা কথা বলা যায়!
এরকম করে আরো দুইদিন কাটলো। গবেষকেরা তার কথাবার্তা মনিটর করলেন কিন্তু তেমন পাত্তা দিলেন না।

১৩ তম দিনে এসে বেশ ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটলো। লোকটা চিৎকার করে বলতে লাগলো যে তার মৃত স্ত্রী তার সাথে যোগাযোগ করছে। এবং সে নিজেও স্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করতে পারছে। তবে রিসার্চারদলের কেউ সেটা খুব পাত্তা দিলেন না। যদি না সাবজেক্ট বিজ্ঞানীদের নিজেদের কোন মৃত আত্মীয়ের সাথে কথা বলে, এই ঘটনাকে তারা হ্যালুসিনেশন ধরে নিবেন। তবে তাদের ভুল ভাঙতে খুব দেরি হলো না। সন্ধ্যার দিকেই দেখা গেল যে সাবজেক্ট প্রতি বিজ্ঞানীর ব্যাপারেই এমন কিছু বলছে যেগুলো কেবল তাদের খুব কাছের মানুষের সাথে হওয়া সম্ভব। মোর ইম্পর্ট্যান্টলি, কোন বিজ্ঞানীর তথ্য কোন মৃত আত্মীয়ের থেকে পাচ্ছে সেটাও সে বলে দিতে থাকলো।

এরকম প্রায় এক সপ্তাহ চললো। সাবজেক্ট দিনরাত মৃত মানুষদের সাথে কথা বলে এবং বিজ্ঞানীদেরকে বিভিন্ন জিনিস জানায় যা রিসার্চাররা নোট করেন। এই সময়ের মধ্যে সাবজেক্ট এমন অনেক কিছুই বলে যার কারণে অধিকাংশ রিসার্চারই পদত্যাগ করে চলে যায়। তবে বিশতম দিনে এসে লোকটার অবস্থা বেশ খারাপ হয়ে যায়। সে জানায় যে সে এত ভয়েস শুনতে পাচ্ছে যে সেটা তার সহ্যসীমার বাইরে চলে গেছে। যতক্ষণ সে জেগে থাকে প্রতিটা মূহুর্তে সে হাজার হাজার কণ্ঠ শুনতে পায়। এ পর্যায়ে এসে সে নিজেকে অনেকবার দেয়ালের দিকে ছুঁড়ে মারে যেন সে ‘ঘুম’ থেকে জাগতে পারে। পরে তার হাজার রিকুয়েস্টের পর বিজ্ঞানীরা তাকে কিছু সিডাটিভ দিয়ে ঘুম পাড়ান।

তবে তিনদিন পর থেকে সেটাও আর কাজ করে না। সাবজেক্ট জানায় যে সে যখন ঘুমাও তখন স্বপ্নেও ‘তারা’ তার সাথে যোগাযোগ করে। এবং জেগে থাকলে যেখানে সে তাদেরকে শুনতে পেত খালি, ঘুমালে তাদেরকে দেখতেও পায়! সে তার নিজের নন ফাংশনিং চোখ খুবলে ফেলতে চায় যেন বাহ্যিক দুনিয়ার কিছু অনুভব করে। অবশ্যই সে চেষ্টা বিফল যায়। রিসার্চাররা অবশ্য তাকে বাধা দেয় নি কেননা টেকনিকালি তার চোখের আর কোন কাজ নাই! তাছাড়া সে নিজের শরীরও বাজেভাবে খামচাতে থাকে যে ব্যাপারটা রিসার্চাররা আমলে নিলেও খুব পাত্তা দেন না। চব্বিশতম দিন। সাবজেক্ট জানায় যে সে আর সহ্য করতে পারছে না। মৃত ব্যক্তিরা তাকে সারাদিন পৃথিবীর ধ্বংস এবং নরক নিয়ে কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে সে প্রায় ৫ ঘন্টার মতো “কোন স্বর্গ কিংবা ক্ষমা নেই” এই একটা কথাই চিৎকার করে বলতে থাকে।

পরদিন সাবজেক্ট রিসার্চারদেরকে রিকুয়েস্ট করে যেন তাকে মেরে ফেলা হয়। অনেক্ষণ ধরে রিকুয়েস্ট করেও যখন কাজ হয় না, তখন সে নিজের মাংস খাওয়ার চেষ্টা করে। লোকটা যেন নিজেকে মেরে না ফেলে সেজন্য তাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলা হয়। নড়াচড়া করতে না পেরে সাবজেক্ট প্রায় কয়েক ঘন্টা চিৎকার করতে থাকে। এরপর হঠাৎ সে চুপ হয়ে যায় এবং সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে থাকে। অবশ্যই সে কিছু দেখতে পায় না, একটা চাহনি কেবল! এরপর শুরু হয় তার নিঃশব্দে কান্না।

প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সাবজেক্ট কোন কথা বলে না। কেবল কাঁদে। এত বেশি চোখের পানি বের হয় তার যে তাকে ডিহাইড্রেশন থেকে বাঁচানোর জন্য স্যালাইন দেয়া প্রয়োজন হয়। ৩৯ তম দিনে এসে লোকটা হঠাৎ করে সিলিং থেকে চোখ সরায়। তার অন্ধত্ব সত্ত্বেও সে গবেষকদলের প্রধানের চোখে চোখ মিলায় এবং বলে “ঈশ্বরের সাথে আমি কথা বলেছি। তিনি আমাদেরকে ত্যাগ করেছেন!” পরমূহুর্তেই সাবজেক্ট মারা যায়।

তার মৃত্যুর কোন স্পেসিফিক কারণ পোস্টমর্টেমে জানা সম্ভব হয় নি।

নোট: এইটা মূলত আমার অনেক প্রিয় একটা ক্রিপিপাস্তা Gateway of Mind এর ভাবানুবাদ। বাস্তবে এমন কোন রিসার্চ হয় নি। হলেও কারো জানা নাই। অনেকদিন ধরে কোন একটা ছোটগল্প ট্রান্সলেট করার ইচ্ছা ছিল এইজন্য লিখলাম।