তুখোরposting

আমার এক বন্ধু, নাম জসীম। এক্স-আইএসসি, এখন নটরডেমে পড়ে। স্কুলজীবন থেকেই ডেমিয়ান-ভিকি ট্র্যাডিশন এর কথা শুনে আসতেসে। এজন্য ওর খুব শখ ভিকারুন্নিসা এক মেয়ের সাথে প্রেম করবে। আমরা অনেক বুঝানোর ট্রাই করলাম যে এইসব ট্র্যাডিশন বলতে কিছু নাই। র‍্যান্ডম স্যাম্পলিং এর জন্য হয় মাঝেমধ্যে এমন। কিন্তু জসীমের এক কথা, “ভিকারুন্নিসার কোন মেয়ের সাথে প্রেম না করলে আমি কীসের ডেমিয়ান হইলাম!”

পরে অনেক খুঁজে মনমতো এক মেয়ে খুঁজে পায়, নাম হলো আনিকা। অনেকদিন আনিকার সাথে কথাবার্তা বলে যখন জসীমের মনে হলো যে আনিকা ওর প্রতি ইন্টারেস্টেড, তখন সাহস করে সে প্রপোজ করে ফেলল। আনিকা প্রপোজাল ম্যাসেজ পেয়েই জসীমকে ফোন দিল। ওই সময় আমরা সবাই মিলে টং এ আড্ডা দিচ্ছিলাম। আনিকার ফোন পেয়ে ধরার আগেই “মামা কাজ তো হয়ে গেসে মেবি” বলে জসীম চিৎকার দিয়ে উঠল। এরপর ‘দাঁড়া স্পিকারে দেই’ বলে ফোন রিসিভ করে লাউডস্পিকার অন করল। ওইপাশ থেকে আনিকা বলে উঠল “কীরে খবিশ। নাম জসীম দেখে ভাবসস যে লটারী করলেই মেয়ে পায়া যাবি? কামলার বাচ্চা নিজের চেহারা দেখসস? দুইদিন একটু কথা বলসি কী বলি নাই আইসে প্রেম করতে। ভাবসস কী? ডেমিয়ান ট্যাগ দেখলেই পটে যাব?” জসীম কাতরস্বরে বলল “আমি বুয়েটেও টিকে দেখাব এইবার। আইডিয়াল, এনডিসি, বুয়েট!” আনিকা আরো আক্রোশে বলল “এই ব্যাটা ফকির, আমার বাপ বুয়েটের টিচার। বুয়েট মারাবি না আমার সামনে। যায়া তুখোড়ে চান্স নে। নাইলে জীবনে নক দিস না”। জসীম বলল, “আচ্ছা এই উইকলির পরই তুখোড়ে ঢুকতেসি।” আনিকা একটু নরম হলো মনে হলো। বলল, “তুখোড়ে গিয়ে সেলফি তুলে সেন্ড করবা। এইটা পারলেই খালি তোমার কথা ভেবে দেখব”।

জসীম পড়ল বিপদে। আমাকে বলল “মামা আমি তো লাস্ট উইকলিতে সব মিলায়ে ২ পাইসি। কী করা যায়? তোর আইডি কার্ড দে মামা, খালি একদিন ক্লাস করে আসব। সেলফিটা নিতে পারলেই হয়। ট্র্যাডিশনের ব্যাপার ভাই…” ওর কাতরভাবে করা রিকুয়েস্ট ফেলতে পারলাম না। আমার আইডি কার্ড দিয়ে তুখোড় ব্যাচে একটা ক্লাস করার সুযোগ দিলাম

ওই ক্লাসটা ছিল ইন্টিগ্রাল ক্যালকুলাসের। আমি পাশা ভাইয়ের প্রিয় বালক। আমার আইডি কার্ড দেখানো লাগে নাই, এম্নেই ঢুকে গেসি। আর জসীম আমার আইডি কার্ড নিয়ে ঢুকলো। তা সেদিন ক্লাস নিচ্ছিল বাবুল ভাই। উনি পড়াতে পড়াতে হঠাৎ বললো, lnx এর ইন্টিগ্রেশন তো তোমরা সবাই জানো… শুনে জসীম লাফ দিয়ে উঠে বলল, জ্বী স্যার এইটা হলো 1/x। তুখোড় ব্যাচের একজনের মুখে ভুল উত্তর শুনে বাবুল ভাইয়ের সন্দেহ হলো। তার উপর “ভাইয়া” না বলে “স্যার” ডাকসে। পাশা ভাইকে জলদি খবর দেয়া হলো। আইডি কার্ড চেক করেই পাশা ভাই বুঝলেন যে ওইটা আমার। জসীমকে জেরা করে ওর আসল নাম রোল নেয়া হল। এরপর পাশা ভাই কম্পিউটারে রোল ইনপুট দিয়েই চিৎকার করে উঠলেন “শুয়োরের বাচ্চা তুই তো ফুল পেমেন্টও করস নাই!” এরপর ওকে সবাই মারতে লাগল।মাইরের শব্দের চোটে জসীমের “ভাই একটা সেলফি প্লিজ” কথাটা কই জানি হারিয়ে গেল।

জসীম আর আনিকার সাথে প্রেম করতে পারে নাই। পাশা ভাই আর সোহাগ ভাইয়ের স্ট্রং রিকমেন্ডেশনে আমি আনিকার সাথে ডেটে যাই। একদিন Makeout 3.0 তে ডেট করতে যেয়ে দেখি জসীম ওই রেস্টুরেন্টের ওয়েটার। আমি I can explain বলার আগেই জসীম হাসিমুখে বললো, “প্যারা নাই দোস্ত, এটলিস্ট ট্র্যাডিশন তো ফলো করসস…”