যে তরমুজ খেয়েছে, সে জানে ফেরেশতাদের খাবারের স্বাদ কেমন!
বাইবেল মতে বনী ইসরায়েল জাতির জন্য স্বর্গ থেকে খাবার আসতো। খাবারের মেন্যুতে কী কী থাকতো জানি না তবে হলফ করে বলা যায় যে সেখানে তরমুজ ইনক্লুডেড ছিল। স্বর্গ থেকে না আসলেও তরমুজ যে স্বর্গীয় ফল এই নিয়ে কারো দ্বিমত থাকা উচিত না। এটা নিঃসন্দেহে খোদার একটা নিয়ামত আর এই তরমুজ দিয়ে যে কত কী করা যায় তা কল্পনারও বাইরে।
যাই হোক স্বর্গ থেকে আসুক না আসুক, তরমুজ ফল হিসাবে বেশ পুরানো। তরমুজের প্রথম খোঁজ পাওয়া যায় প্রায় ৫০০০ বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায়। তখন তরমুজ আজকের মতো মিষ্টি ছিল না, বরং ছিল তিতা। তবে এই তিতা দেখে এর কদর কোন কম ছিল না। বিশাল একটা ফল, তার ৯০ ভাগ পানি - এই ব্যাপারটাই তরমুজকে অন্য সব ফলের থেকে আলাদা করে ফেলে। পানির অভাব তো তরমুজ মিটাতোই, ক্ষুধা লাগলেও আরামসে একটু তরমুজ পেটে চালান করে দেয়া যেতো। তৎকালীন সময়ের ট্রাভেলাররা তাই ছিল তরমুজের পূজারী।
কালাহারি মরুভূমিতে যেই ফলের শুরু, সেই ফল ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল নামিব, গুবান, সাহারাসহ পুরো আফ্রিকায়। সময়ের সাথে সাথে এর জায়গা হলো অভিজাতদের ঘরে। মিশরের ফারাওদের তরমুজের প্রতি ছিল সফট কর্নার। জীবিত অবস্থাতে তো বটেই, মৃত্যুর পরেও তারা তরমুজের লোভ ছাড়তে পারতো না। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তাদের সমাধিতে। মমির পাশে আস্ত তরমুজের বীজ কিংবা আস্ত তরমুজ রেখে দেয়া হতো। অবশ্য পরকালের যাত্রা খুবই লম্বা, এসময় তরমুজ ছাড়া চলা কি আদৌ সম্ভব?
আফ্রিকার আভিজাত্য একদিন শেষ হলো। ইউরোপ আর এশিয়া তে সরে এলো সভ্যতার কেন্দ্র। তরমুজও একইভাবে জায়গা করে নিল নতুন সভ্যতায়। গ্রীস আর রোমে তরমুজ পরিচিত হলো বিকল্পহীন ওষুধ হিসাবে। হিটস্ট্রোক থেকে ছোট্ট শিশুদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে তরমুজ ছিল অদ্বিতীয়। তবে এই চিকিৎসা ছিল একটু অন্যরকম। তরমুজ দিয়ে চিকিৎসার জন্য তরমুজের খোলস নিয়ে বাচ্চাদের মাথার উপর রেখে দেয়া হতো। পিচ্চি পোলাপান মাথায় ঠান্ডা খোলস নিয়ে বসে থাকতো যাতে তাদের মাথা ঠান্ডা থাকে। প্রথমে তরমুজ খেয়ে পেট ঠান্ডা করা, এরপর এর খোলস মাথায় দিয়ে মাথা ঠান্ডা করার যে একটা আমেজ, সেটা সেসময়ের সকল আয়ুর্বেদশাস্ত্রীরই মনে ধরে। তবে রোম আর গ্রীসের বাইরে তরমুজ খুব জনপ্রিয় হয় নি।
৭শতকে তরমুজ আসে ভারতে। আর এরও ছয়শো বছর পরে মুরদের মাধ্যমে আইবেরিয়ান পেনিনসুলায় এই ফল পৌঁছে যায়। আর এরপরই শুরু হয় গোটা ইউরোপব্যাপী তরমুজের চাষ। এরপর ইউরোপ পেরিয়ে আমেরিকায়। যে ফল একসময় ছিল মরুর বেদুইনদের পিপাসা মেটানোর উপায়, সেই ফল রাজত্ব শুরু করে পুরো দুনিয়ায়।
গরমের দিনে তরমুজের মতো একটা ফল পাওয়া বেজায় কঠিন। ধরুন আপনি বাইরে থেকে আসছেন। জলদি করে একটা তরমুজ নিয়ে কেটে ফেলতে পারেন। তরমুজ কাটারও কত রকম উপায়। কেউ আইস কিউবের মতো করে কাটে। কেউ লম্বা তিনকোণা শেপ বানায়। অনেকে তরমুজের উপর হালকা করে লবণ ছিটিয়ে দেয় আলাদা ফ্লেভারের জন্য। যে যেভাবেই কাটুক, তরমুজ পেটের মধ্যে চালান করে দেয়া খুবই সহজ। মুখে পুরে কামড় দিলেই শেষ। মূহুর্তের মধ্যে তরমুজের মিষ্টতা পুরো মুখে ছড়িয়ে যায়, সাথে পিপাসা মিটে গেল, একটু বেশি করে খেলে ক্ষুধা-ও চলে গেল। আর আপনি যদি হন নিতান্ত কাট্টাখোট্টা, তারপরেও তরমুজ আপনার কাজে লাগবে। হয়তোবা কোন পাওনাদার আপনার কাছে আসলো…
এইযে একটা ফল, পিপাসা মেটানো থেকে শুরু করে আত্মরক্ষা - সবকিছুই যাকে দিয়ে হয়, এই ফল স্বর্গ থেকে আসে নাই, এটা বিশ্বাস করার কি কোন উপায় আছে? তাছাড়া মার্ক টোয়েন তো বলেই দিয়েছেন, “যে তরমুজ খেয়েছে, সে জানে ফেরেশতাদের খাবারের স্বাদ কেমন!”