বোর্ড বই উপাখ্যান
ডিপার্টমেন্টের এক বড় ভাইকে নিয়ে অনেক চিন্তিত অবস্থায় আছি। উনি পাশ করেছেন অনেক আগে, উচ্চশিক্ষার পাঠও চুকিয়ে ফেলেছেন। ইদানীং বইটই লিখা শুরু করেছেন। বইমেলার জন্য বই না - উনি লিখেন পাঠ্যবই। সেটা আবার লাখ লাখ পোলাপান স্কুলে গিয়ে পড়ে।
বড় ভাই ইদানীং এনজাইটি তে ভুগতেছেন কারণ তার মতে নতুন প্রজন্ম উচ্ছন্নে যাচ্ছে। এ নিয়ে উনাকে কম ডাক্তার দেখানো হয় নাই। যতই বুঝ দেয়া হয় উনাকে, উনি মানতে পারেন না। কেউ কেউ ধারণা করছেন যে পাঠ্যবইয়ের কারণে মানুষের বদদোয়া লেগে এই অবস্থা, কিন্তু উনি এইসবে বিশ্বাস করেন না দেখে ফকির তান্ত্রিক এসব জায়গায় চেক করা হয় নাই - মডার্ন মেডিসিনই ভরসা।
কোন পথ্যিতেই যেহেতু কিছু হলো না, উনি শেষমেশ শরণাপন্ন হলেন ফেমাস এক সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে - এত ফলোয়ার যেই লোকের, উনি নিশ্চয়ই একটা সমাধান দিবেন।
সেশন শুরু হলো। সাইকিয়াট্রিস্ট প্রথমে প্রাইভেসির জ্ঞান দিলেন, জানালেন কীভাবে উনার সব সমস্যা কেবল বড় ভাই আর সাইকিয়াট্রিস্টের মাঝে থাকবে - আর কেউ জানাতে পারবেন না। এরপর বললেন, “তাহলে শুরু করি।”
বড় ভাই বললেন, “ফিউচার জেনারেশনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এই চিন্তায় আমার ঘুম হয় না। আমি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।”
সাইকিয়াট্রিস্ট মাথা নেড়ে বললেন, “আপনার কেন মনে হয় ওরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে?”
বড় ভাই বললেন, “ওরা কেউ আর অবাক হয় না। দুনিয়া নিয়ে চিন্তা করে না।”
মনোবিদ বুঝলেন না ব্যাপারটা। “অবাক হয় না বলতে কী বুঝাচ্ছেন?”
“এই ধরেন আপনি যদি লাফ দেন, পৃথিবী আপনাকে নিচের দিকে টানে। আপনিও কিন্তু পৃথিবীকে উপরের দিকে টানেন। এইযে একজন মানুষ পৃথিবীর মতো কিছুকে টানতে পারে - এটা ভাবলে কি অবাক হওয়ার কথা না? কিন্তু নতুন প্রজন্ম অবাক হয় না। উলটা এটা নিয়ে হাসাহাসি করে।”
সাইকিয়াট্রিস্ট সমস্যাটা ধরতে পারলেন। কিন্তু কোন প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বললেন, “এটা বাদে আর কিছু আছে?”
“জ্বী। এরা কোন কিছু পরীক্ষা করে দেখতে চায় না। সবকিছু বিশ্বাস করে।”
“কীরকম?”
“এইযে এরা পড়ে যে সবকিছুর সমান আর বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে, কেউ কি এটা পরীক্ষা করে দেখেছে? আমার মনে হয় না।”
সাইকিয়াট্রিস্ট বললেন, “এটা তো পরীক্ষা করার কিছু নাই। আপনারা কি বইয়ে পরীক্ষাটা কীভাবে করবে সেটা লিখেছেন?”
বড় ভাই এবার রেগে গেলেন। বললেন, “সবকিছু কি আমরা বলে দিব নাকি? এমনিতেই পাঠ্যবই সুন্দর, সাবলীল আর মজাদার করছি। তাও সবার এত রাগ। পরীক্ষার কথা লিখলে তো আমাদের মুণ্ডপাত করবে।”
মনোবিদ একটু চুপ করে বললেন, “বুঝলাম।”
এবার বড় ভাই চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করলেন, “এইযে এটাই সমস্যা। সবাই খালি বুঝতে চায়। কেউ মুখস্থ করতে চায় না। এইজন্যই এই অবস্থা সবার। আরে ভাই আমি মুখস্থ করে করে করে এসএসসিতে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে গোল্ড মেডালিস্ট হলাম। এখন পোলাপানদের জন্য বই লিখতেসি। আপনি আছেন বুঝার বিদ্যা নিয়ে। মনে রাখবেন, এই দুনিয়ায় কেউ জন্ম নিয়েই বুঝা শিখে না। আগে মুখস্থ করে।”
বলতে বলতে উনি রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।
…
সবাই হয়তো ভাবতে পারে যে বড় ভাই আর সাইকিয়াট্রিস্টের এই থেরাপী সেশনের ডিটেলস আমি কীভাবে জানলাম। আসলে সাইকিয়াট্রিস্ট এই ঘটনা নিজের ফেসবুক পেজেই পোস্ট করেছেন।