কলেজ জীবনের একমাত্র মেমোরেবল মেমোরি
কলেজ লাইফের শুরুর দিকে লাইফ বেশ এনজয়েবল ছিল। নতুন নতুন পিসি কিনসি তখন। সারারাত সিরিজ দেখতাম, সকালে কলেজে গিয়ে ঘুম। ঘুম থেকে উঠতাম টিফিন টাইমে। এরপর টিফিন খেয়ে ল্যাবের রাফশিট লিখা শুরু করতাম। এই রুটিন মিডটার্ম পর্যন্ত ছিল।
একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনি কলেজের কোন ছেলে দুই তলা থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড এটেম্পট নিসে। তাও শুনসি বিদ্যুৎ স্যারের ক্লাসে, “তোমাদেরকে তো কিছু বলাও যায় না। পরে দুই তলা থেকে লাফ দিবা।” এরপর ক্লাসের সবার খেয়াল হইসে যে দুই তলা থেকে কেউ লাফ দিসে। কিন্তু কে লাফ দিসে এর থেকে বড় প্রশ্ন হচ্ছে কেন লাফ দিসে? আর তাও মাত্র ১৫ফুট উপর থেকে কেন? ছুটির সময় বের হয়ে দেখি ফ্লোরে রক্ত জমে আছে। কেউ যেন ভুলে রক্তে পারা না দেয়, সেজন্য একটা বেঞ্চ রাখা। কিন্তু রক্তের পরিমাণ নিতান্তই অল্প - আমার মাঝেমধ্যে নাক দিয়ে রক্ত পরে, ওইটাও পরিমাণে ফ্লোরে যা জমসে তার থেকে বেশি। এইটা কেমন আত্মহত্যার প্রচেষ্টা বুঝলাম না।
পরে জানতে পারলাম কিছু কাহিনী। এক বন্ধুর মুখে যা শুনলাম, সেটা হলো এরকম - বন্ধু রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে একমনে একটা সিঙ্গারা খাচ্ছিল। এরপর হঠাৎ করে হাইওয়ে ব্যান্ডের গানের মতো “…আকাশ থেইকা নামলো পরী…“। কিন্তু পরীর জায়গায় এনডিসি ফার্স্ট ইয়ারের এক ছেলে। বন্ধু কী করবে বুঝতে না পেরে এক ছেলেকে বললো যে “এই দেখো কে জানি পরে গেসে”, কিন্তু ওই ছেলে “ওহ” এর থেকে বেশি কিছু বললো না।
যাই হোক, এরপর গ্রুপ ৯ এর আরো পোলাপান ডাকা হলো, ‘পরী’কে হাসপাতাল এ পাঠানো হলো, প্রমাণ সংরক্ষণে জন্য বেঞ্চ রাখা হলো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু সে লাফ কেন দিলো, এই কাহিনী জানা গেল না।
সব রহস্যের জট খুললো সন্ধ্যাবেলায়। ফেসবুকে দেখি আত্মহত্যার চেষ্টা করা ছেলে নিজেই পোস্ট দিসে। তার ভাষ্যমতে সে এক পিপাসার্ত বন্ধুকে পানি দেয়ার জন্য স্টিলের বোতল ছুড়ে মারসিল। কিন্তু তামিম ইকবালের মতো ফিল্ডিং এবিলিটি থাকায় সেটা সে ধরতে পারে নাই এবং ঠোঁটে লেগে তার ঠোঁট কেটে যায়। এজন্য ফাদার সুশান্ত সেই ছেলেকে ডেকে পাঠায় এবং বলে যে তার মতো মারমুখী ছেলে নটরডেমে দরকার নাই। এরপর তাকে বেশ বাজেভাবে অপমান করে সাসপেনশন লেটার ধরিয়ে দেয়া হয়। ফাদার হয়তো তাকে ছাত্রলীগে জয়েন করে মারপিট করতেও বলতেন, তবে এর আগেই লজ্জায় অপমানে দ্বিতীয় তলার বেলকনি থেকে লাফ দেয়। তবে মৃত্যুর চেয়ে বাজে জিনিস হয় - তার বেশ কিছু দাঁত ভেঙ্গে যায়। “আমার মৃত্যু কোন কাফন বিক্রেতার মুখে হাসি ফোটাবে” মোমেন্ট তো হলো না-ই, দাঁত না থাকায় সে নিজেও আর ভালোভাবে হাসতে পারবে না।
বেশ নির্মম ঘটনা। মেন্টাল হেলথের উপর কত বড় আঘাত আসলে কেউ এমন কাজ করতে পারে! হয়তো এই পোস্টের পর হেলদি মাইন্ডস গ্রুপের সবাই মিলে নটরডেম কলেজ-কে ক্যান্সেল করে দিতে পারতো, কিন্তু পোস্টের মধ্যে একটা বিশেষ বাক্যের জন্য সব উলটপালট হয়ে যায় - “যে ছেলেটা আঘাত পেয়েছিল, সে খ্রিস্টান ছিল। এজন্য হয়তো ফাদার বেশি রেগে গেছিলেন” - এরকম কিছু একটা। ব্যাস! হেলদি মাইন্ডস এডমিনদের বদলে তার কমেন্ট সেকশনে জড়ো হলো হাজারো মিশনারি সিম্প। কীভাবে নটরডেম কলেজে ক্লাসরুমের চেয়ে মসজিদ বেশি এবং মসজিদে হিন্দুরাও নামাজ পড়ে - এই সংক্রান্ত কপিপাস্তা দিয়ে কমেন্ট সেকশন ছেয়ে গেল।
অল্প সময়ের মধ্যে বড় রকমের L+ratio খেয়ে বেচারার পোস্ট নাই হয়ে গেল। এতশত কমেন্টের মাঝে আমি কেবল আমার বন্ধু তানভীর থামিদকে দেখলাম বেচারাকে সাপোর্ট দিতে। বোধ করি এই ঘটনা দিয়েই তার SJW জীবনের শুরু…
যাই হোক, দুইদিন পর সবাই এই ঘটনা ভুলে গেল। আমিও ফিরে গেলাম সিরিজ-কলেজ-ঘুম রুটিনে। মাঝে দিয়ে জানলাম যে নটরডেম কলেজের খ্রিস্টান পাদ্রীদের থেকে ধর্মপ্রাণ মুসলিম আর একটাও নাই।